আরাফাত আল-আমিন, মতলব উত্তর:
চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলায় ৩৮ শতাংশ মালিকানা টিউবওয়েলে ধরা পড়েছে আর্সেনিক! এ উপজেলায় মালিকানা টিউবওয়েল রয়েছে প্রায় ৪০ হাজার। এরমধ্যে গত ২০২২ সালে ৩১ হাজার ৯৬০ টি টিউবওয়েলের পানি পরীক্ষা করে ১২ হাজার ১৪১ টি টিউবওয়েলের পানিতে আর্সেনিক ধরা পড়েছে।
উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গত ২০২১ সালের ডিসেম্বরে আর্সেনিক প্রজেক্টের মাধ্যমে আউটসোর্সিং জনবল নিয়োগ করে টিউবওয়েলের পানি পরীক্ষা করা হয়। এরমধ্যে বাগানবাড়ি ইউনিয়নে ১ হাজার ২৫ টি, দুর্গাপুর ইউনিয়নে ১ হাজার ৪৩৮ টি, এখলাছপুর ইউনিয়নে ৪২৫ টি, ফরাজীকান্দি ইউনিয়নে ১ হাজার ৮৭ টি, ইসলামাবাদ ইউনিয়নে ৬৭২ টি, জহিরাবাদ ইউনিয়নে ৪৯৫ টি, কলাকান্দা ইউনিয়নে ৭২১ টি, মোহনপুর ইউনিয়ন দে ৭৩২ টি, ফতেপুর পশ্চিম ইউনিয়নে ৫২৭ টি, সাদুল্লাপুর ইউনিয়নে ১ হাজার ৯৮ টি, ষাটনল ইউনিয়নে ১ হাজার ৯ টি ও সুলতানাবাদ ইউনিয়নে ৫৩৩ টি টিউবওয়েলে আর্সেনিক ধরা পরে। এছাড়াও ছেংগারচর পৌরসভা, ফতেপুর পুর্ব ও গজরা ইউনিয়নেও বেশ কিছু টিউবওয়েল সহ মোট ১২ হাজার ১৪১ টি টিউবওয়েলে আর্সেনিক ধরা পড়েছে।
স্থানীয় এলাকার বিভিন্ন অঞ্চলে ঘুরে দেখা গেছে, মালিকানা টিউবওয়েলগুলো থেকে মানুষ প্রতিনিয়ত পানি পান করছে। বিশেষ করে একক পরিবারগুলো মালিকানা টিউবওয়েলের পানি ছাড়া বিকল্প ব্যবস্থায় পানি পাচ্ছেন না। পর্যাপ্ত বাজেট না থাকায় গভীর নলকূপও স্থাপন করতে পারছেন না। ফলে বাধ্য হয়ে প্রতিনিয়ত আর্সেনিক বাহিত পানি পান করছেন কয়েক লাখ মানুষ।
উপজেলা জনস্বাস্থ্য উপসহকারী প্রকৌশলী সজিব চন্দ্র দাস বলেন, মতলব উত্তর উপজেলায় গভীর নলকূপ আছে ৯ হাজার ৮২৫ টি। এগুলোর মধ্যে আর্সেনিক পাওয়া যায় নি, এগুলো আর্সেনিক মুক্ত। মালিকানা টিউবওয়েল যেগুলো গভীরতা খুবই কম ওইসব টিউবওয়েলে ৩১ হাজার ৯৬০ টি টিউবওয়েলের পানি পরীক্ষা করা হয়েছিল। এরমধ্যে আর্সেনিক পাওয়া গেছে ১২ হাজার ১৪১ টিতে। আর্সেনিক পানি পান করার কারণে মানুষ আর্সেনিক অ্যাসিস রোগে আক্রান্ত হতে পারে। যার দৃশ্যমান হলো হাতে গুটি গুটি ধরনের চর্মরোগ দেখা দিবে। এছাড়াও এ রোগের কারণে ১০-১৫ বছর পরে মানবদেহে ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে এবং মারাত্মক রোগে আক্রান্ত হতে পারে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের পক্ষ থেকে পরামর্শ হলো, পাশে যাদের বাড়িতে আর্সেনিক মুক্ত টিউবয়েল আছে তাদের থেকে পানি সরবরাহ করে পানি করতে হবে। অথবা আর্সেনিক প্রতিরোধী কোন ফিল্টার ব্যবস্থাপনা করে পানি পান করার ব্যবস্থা করতে হবে।
উপজেলার সুলতানাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুবকর সিদ্দিক খোকন বলেন, আর্সেনিক টিউবওয়েলের পরিমাণ দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। এই ধারা থেকে মুক্তি পেতে আমাদের সচেতন হতে হবে। আমাদের ইউনিয়নে আমরা মানুষকে সচেতন করার চেষ্টা করছি।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহমুদা কুলসুম মনি বলেন, আর্সেনিকের বিষয়টি খুবই জটিল। সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সঙ্গে কথা বলে এই বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
সচেতন মহল মনে করেন, পরিবেশগত কারণে আর্সেনিকের পরিমাণ বাড়ছে। এর থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে সবাইকে সচেতন হতে হবে। না হলে আর্সেনিকের ভয়াবহতা খুবই দ্রুত ছড়িয়ে পড়বে। এ নিয়ে সরকারকেও কাজ করার অনুরোধ জানান সচেতন মহল।
আর্সেনিক রোগীর কোন তথ্য নেই মতলব উত্তর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। তবে মেডিকেল টেকনিশিয়ান ভাষান কীর্তনীয়া বলেন, ২০২৩ সালে ৩৩ জন আর্সেনিক রোগীর তালিকা ছিল তারা চিকিৎসা নিয়েছেন। আর ২০২৪ সালে ৪ জন আর্সেনিক রোগীর তথ্য আছে। এছাড়া আমাদের কাছে আর কোন রোগী আসে নাই।
মতলব উত্তর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ হাসিবুল ইসলাম বলেন, আর্সেনিক হল একটি স্লোপয়েজম। আর্সেনিক দিয়ে আগের দিনে রাজা বাদশাদের মেরে ফেলার কাজে লাগাতো। আর্সেনিকে যে আক্রান্ত হবে, তার জীবন শেষ হয়ে যাবে চিকিৎসা করাতে করাতে। এ রোগে আক্রান্ত হলে ব্রেইন, হার্ট, কিডনি সহ শরীরের সকল অঙ্গে ক্যান্সার হতে পারে। আর্সেনিকের প্রাথমিক লক্ষণ চর্মরোগ সৃষ্টি হয়। সবাইকে বিশুদ্ধ পানি পান করার ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে।