ঢাকা ১০:১৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ব্যাংক থেকে টাকা নগদ উত্তোলনের চেয়েও সরিয়ে নিচ্ছে বেশি

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৮:১৮:২৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২২
  • ৫৫ Time View

ছবি-ত্রিনদী।

ব্যাংকে টাকা নগদ ‍উত্তোলনের চেয়েও সরিয়ে নেয়ার প্রবনতা বাড়ছে। গ্রাহকরা চেক বা অনলাইনের মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যাংকে টাকা সরিয়ে নিচ্ছে। এতে টাকার অভাব বোধ করছেনা ব্যাংকগুলো।

ব্যাংক থেকে টাকা তোলার হিড়িক পড়েছে—কয়েক দিন বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এমন গুজব ছড়িয়ে পড়ে। তারই পরিপ্রেক্ষিতে গত কয়েক দিন রাজধানীর গুলশান ও বনানী এলাকায় ৮টি ব্যাংকের ১০টি শাখা ঘুরে দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র। সেখানে টাকা তোলার পাশাপাশি জমা করছেন গ্রাহকেরা। তবে কয়েকটি ব্যাংকে অনলাইন ও চেকের মাধ্যমে অর্থ স্থানান্তর বেড়েছে।

কয়েকটি ব্যাংকের গ্রাহকেরা এখন টাকা রাখতে নিরাপদ ব্যাংক খুঁজছেন। এতে এক ব্যাংক থেকে টাকা অন্য ব্যাংকে যাচ্ছে। তবে বেশির ভাগ গ্রাহক নগদ টাকা উত্তোলন না করে অনলাইনে বা চেকের মাধ্যমে এক ব্যাংক থেকে অন্য ব্যাংকে টাকা সরিয়ে নিচ্ছেন। ফলে ব্যাংকে নগদ টাকার তেমন সংকট হচ্ছে না।

রাজধানীর এয়ারপোর্ট সড়ক দিয়ে বনানীতে প্রবেশের শুরুতে বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের শাখা। গতকাল সকালে ব্যাংকটির ওই শাখায় গিয়ে কোনো গ্রাহক দেখা গেল না। এবি ব্যাংকের বনানী শাখায় দেখা গেল, দুজন গ্রাহক টাকা উত্তোলন করতে ও একজন গ্রাহক টাকা জমা দিতে এসেছেন। এনসিসি ব্যাংক, এনআরবি ব্যাংক ও স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের বনানী শাখায় গিয়েও স্বাভাবিক চিত্রই দেখা গেল।

বেসরকারি খাতের দেশি মালিকানাধীন সিটি ব্যাংকের বনানী শাখায় গিয়েও দেখা গেল, ৮-১০ জন গ্রাহক অপেক্ষায় ছিলেন। তাঁদের বেশির ভাগই এসেছেন ক্রেডিট কার্ডের বিল জমা দিতে। কেউ কেউ বিদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির জন্য নতুন হিসাব খুলতে এসেছেন। একজন গ্রাহক পাওয়া গেল, যিনি টাকা তোলার জন্য এসেছেন।

আবার ইকবাল সেন্টারের প্রিমিয়ার ব্যাংকের বনানী শাখায় বেশ ভিড় দেখা গেল। তবে এটা ব্যাংকের স্বাভাবিক চিত্র বলে জানালেন ব্যাংকটির একাধিক কর্মকর্তা।

যোগাযোগ করা হলে প্রিমিয়ার ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম রিয়াজুল করিম বললেন, ‘যে পরিমাণ টাকা উত্তোলন হয়েছে, একই পরিমাণ অর্থ জমাও হয়েছে। আমাদের ২৯ হাজার কোটি টাকা আমানত ছিল, এখনো তা-ই আছে।’

এরপর গুলশান-২ মোড়সংলগ্ন ইসলামী ব্যাংকের গুলশান করপোরেট শাখা। শাখাটিতে গিয়ে দেখা গেল শতাধিক গ্রাহক লাইনে দাঁড়ানো। তাঁদের বেশির ভাগ এসেছেন মাসিক সঞ্চয় স্কিমের টাকা জমা দিতে। পাশাপাশি অনেকে অন্য ব্যাংকে টাকা স্থানান্তরে চেক জমা দিয়েছেন। একই চিত্র দেখা গেল ব্যাংকটির গুলশান-১ শাখাতেও।

শরিয়াহভিত্তিক ইসলামি ধারার ব্যাংকগুলোতে কিছুটা তারল্য-সংকট থাকলেও ভালো আমানত পাচ্ছে প্রচলিত ধারার ব্যাংকগুলো। বিশেষ করে প্রচলিত ধারার যেসব ব্যাংকের ইসলামি ব্যাংকিং সেবা রয়েছে, তারা ভালো আমানত পাচ্ছে।

সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসরুর আরেফিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘চলতি মাসের প্রথম সাত দিনে আমাদের আমানত বেড়েছে ১৯৫ কোটি টাকা। ফলে চলতি মাসে ৮০০ কোটি টাকা আমানত বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করছি। অন্য সময় প্রতি মাসে আমানত বাড়ত ৫২০ কোটি টাকা। এখন এক ব্যাংকের আমানত অন্য ব্যাংকে যাচ্ছে। এটা ভালো যে টাকা ব্যাংকের বাইরে চলে যাচ্ছে না। তাতে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসছে।’

খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এক ব্যাংক থেকে অন্য ব্যাংকে টাকা স্থানান্তর হলে তাতে ব্যাংক খাতের কোনো সমস্যা নেই। ঘাটতিতে পড়া ব্যাংক অন্য ব্যাংক থেকে টাকা ধার করতে পারবে। টাকা ব্যাংকের বাইরে চলে গেলেই শুধু সমস্যা। (প্রথম আলো)

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

Popular Post

কচুয়ার জাহিদুল ইসলাম বাংলাদেশ স্কাউটসের সর্বোচ্চ সম্মান মহামান্য রাষ্ট্রপতি স্কাউট অ্যাওয়ার্ড অর্জন

ব্যাংক থেকে টাকা নগদ উত্তোলনের চেয়েও সরিয়ে নিচ্ছে বেশি

Update Time : ০৮:১৮:২৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২২

ব্যাংকে টাকা নগদ ‍উত্তোলনের চেয়েও সরিয়ে নেয়ার প্রবনতা বাড়ছে। গ্রাহকরা চেক বা অনলাইনের মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যাংকে টাকা সরিয়ে নিচ্ছে। এতে টাকার অভাব বোধ করছেনা ব্যাংকগুলো।

ব্যাংক থেকে টাকা তোলার হিড়িক পড়েছে—কয়েক দিন বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এমন গুজব ছড়িয়ে পড়ে। তারই পরিপ্রেক্ষিতে গত কয়েক দিন রাজধানীর গুলশান ও বনানী এলাকায় ৮টি ব্যাংকের ১০টি শাখা ঘুরে দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র। সেখানে টাকা তোলার পাশাপাশি জমা করছেন গ্রাহকেরা। তবে কয়েকটি ব্যাংকে অনলাইন ও চেকের মাধ্যমে অর্থ স্থানান্তর বেড়েছে।

কয়েকটি ব্যাংকের গ্রাহকেরা এখন টাকা রাখতে নিরাপদ ব্যাংক খুঁজছেন। এতে এক ব্যাংক থেকে টাকা অন্য ব্যাংকে যাচ্ছে। তবে বেশির ভাগ গ্রাহক নগদ টাকা উত্তোলন না করে অনলাইনে বা চেকের মাধ্যমে এক ব্যাংক থেকে অন্য ব্যাংকে টাকা সরিয়ে নিচ্ছেন। ফলে ব্যাংকে নগদ টাকার তেমন সংকট হচ্ছে না।

রাজধানীর এয়ারপোর্ট সড়ক দিয়ে বনানীতে প্রবেশের শুরুতে বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের শাখা। গতকাল সকালে ব্যাংকটির ওই শাখায় গিয়ে কোনো গ্রাহক দেখা গেল না। এবি ব্যাংকের বনানী শাখায় দেখা গেল, দুজন গ্রাহক টাকা উত্তোলন করতে ও একজন গ্রাহক টাকা জমা দিতে এসেছেন। এনসিসি ব্যাংক, এনআরবি ব্যাংক ও স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের বনানী শাখায় গিয়েও স্বাভাবিক চিত্রই দেখা গেল।

বেসরকারি খাতের দেশি মালিকানাধীন সিটি ব্যাংকের বনানী শাখায় গিয়েও দেখা গেল, ৮-১০ জন গ্রাহক অপেক্ষায় ছিলেন। তাঁদের বেশির ভাগই এসেছেন ক্রেডিট কার্ডের বিল জমা দিতে। কেউ কেউ বিদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির জন্য নতুন হিসাব খুলতে এসেছেন। একজন গ্রাহক পাওয়া গেল, যিনি টাকা তোলার জন্য এসেছেন।

আবার ইকবাল সেন্টারের প্রিমিয়ার ব্যাংকের বনানী শাখায় বেশ ভিড় দেখা গেল। তবে এটা ব্যাংকের স্বাভাবিক চিত্র বলে জানালেন ব্যাংকটির একাধিক কর্মকর্তা।

যোগাযোগ করা হলে প্রিমিয়ার ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম রিয়াজুল করিম বললেন, ‘যে পরিমাণ টাকা উত্তোলন হয়েছে, একই পরিমাণ অর্থ জমাও হয়েছে। আমাদের ২৯ হাজার কোটি টাকা আমানত ছিল, এখনো তা-ই আছে।’

এরপর গুলশান-২ মোড়সংলগ্ন ইসলামী ব্যাংকের গুলশান করপোরেট শাখা। শাখাটিতে গিয়ে দেখা গেল শতাধিক গ্রাহক লাইনে দাঁড়ানো। তাঁদের বেশির ভাগ এসেছেন মাসিক সঞ্চয় স্কিমের টাকা জমা দিতে। পাশাপাশি অনেকে অন্য ব্যাংকে টাকা স্থানান্তরে চেক জমা দিয়েছেন। একই চিত্র দেখা গেল ব্যাংকটির গুলশান-১ শাখাতেও।

শরিয়াহভিত্তিক ইসলামি ধারার ব্যাংকগুলোতে কিছুটা তারল্য-সংকট থাকলেও ভালো আমানত পাচ্ছে প্রচলিত ধারার ব্যাংকগুলো। বিশেষ করে প্রচলিত ধারার যেসব ব্যাংকের ইসলামি ব্যাংকিং সেবা রয়েছে, তারা ভালো আমানত পাচ্ছে।

সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসরুর আরেফিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘চলতি মাসের প্রথম সাত দিনে আমাদের আমানত বেড়েছে ১৯৫ কোটি টাকা। ফলে চলতি মাসে ৮০০ কোটি টাকা আমানত বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করছি। অন্য সময় প্রতি মাসে আমানত বাড়ত ৫২০ কোটি টাকা। এখন এক ব্যাংকের আমানত অন্য ব্যাংকে যাচ্ছে। এটা ভালো যে টাকা ব্যাংকের বাইরে চলে যাচ্ছে না। তাতে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসছে।’

খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এক ব্যাংক থেকে অন্য ব্যাংকে টাকা স্থানান্তর হলে তাতে ব্যাংক খাতের কোনো সমস্যা নেই। ঘাটতিতে পড়া ব্যাংক অন্য ব্যাংক থেকে টাকা ধার করতে পারবে। টাকা ব্যাংকের বাইরে চলে গেলেই শুধু সমস্যা। (প্রথম আলো)