ঢাকা 9:30 am, Friday, 25 July 2025

মিয়ানমারে জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ লড়ছে যেসব নারীরা

  • Reporter Name
  • Update Time : 10:56:08 am, Monday, 5 February 2024
  • 6 Time View

ছবি-সংগৃহিত।

এক সময় স্কুল শিক্ষিকা ছিলেন ২৬ বছরের অ্যাঞ্জেলিক মো। কিন্তু এখন তিনি একদল নারী সেনাদের ইউনিট কম্যান্ডার। তার স্বামীকে ধরে নিয়েগেছে জান্তা বাহিনী। তার সন্তানকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। তাদের গ্রাম জ্বালিয়ে দিয়েছে তারা। তিনি ‘কারেনি ন্যাশনালিটিস ডিফেন্স ফোর্স’ বা কেএনডিএফ বাহিনীর সদস্য। মিয়ানমারের পূর্বাঞ্চলীয় কায়াহ প্রদেশে জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিদ্রোহ গড়ে তুলেছে এই বাহিনী।

মো বলেন, আমি বেশ কয়েকবার ফ্রন্টলাইনে গিয়েছি। আমার মনে আছে, আমি একবার জান্তা সেনাদের থেকে মাত্র ৫০ মিটার দূর থেকে যুদ্ধ করছিলাম। আমাদের যোদ্ধারা তাদের আগেই দেখে ফেলে এবং গুলি চালায়। যদি আমরা আগে তাদের না দেখতাম তাহলে নিশ্চিতভাবেই আমাদের সবাইকে মরতে হতো।

জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা বাহিনীগুলোর মধ্যে কেএনডিএফ শক্তির বিচারে প্রথম দিকে থাকবে। মূলত স্থানীয় তরুণদের নিয়ে এই বাহিনী গঠিত। এছাড়া মিয়ানমারের জাতিগত বিদ্রোহী গ্রুপ কারেনি আর্মিও এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। এই যুদ্ধে যোগ দেয়ার আগে মো একটি পাবলিক স্কুলে পাঁচ বছর ধরে কাজ করেন। এসব যুদ্ধারা মুলত: সব হারিয়েছে জান্তা বাহিনীর হাতে। সন্তান, স্বামী এবং কি বাড়ী ঘর। এখন তারা দেশেকে বাঁচাতে যুদ্ধে নাম লিখিয়েছে।

সামরিক বাহিনী বিদ্রোহীদের দমনে প্রথম থেকেই কঠিন পথে হেটেছে। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে ক্ষমতা দখলের পর তারা অন্তত ৪ হাজার ২০০ বেসামরিক নাগরিককে হত্যা করেছে। বন্দী করেছে ২০ হাজারের বেশি। মো প্রাথমিকভাবে সশস্ত্র প্রতিরোধে যোগ দিতে অনিচ্ছুক ছিলেন। তার বন্ধুরা তাকে বারবার আহ্বান জানালেও তিনি আগ্রহী ছিলেন না। যুদ্ধ এবং বিমান হামলার তীব্রতা বেড়ে যাওয়ার পরেও তিনি শিক্ষকতা চালিয়ে যান। কিন্তু দিন দিন পরিস্থিতি আরও কঠিন হতে থাকে। এক পর্যায়ে তিনি অস্ত্র হাতে তুলে নেয়ার সিদ্ধান্ত নেন।

মিয়ানমারের অনেক তরুণীই এই কাজ করেছেন। তারা একেকজন একেক ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে এসেছেন। কেউ চিকিৎসক, কেউবা নার্স, শিক্ষক, গৃহিণী, বিক্রয়কর্মী ও সরকারী কর্মচারী। কেএনডিএফ বলছে তাদের প্রায় ৬০০ নারী যোদ্ধা রয়েছে। ২০২২ সালের মে মাসে কেএনডিএফ সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে সংগ্রামে নারীডের অংশগ্রহণকে তুলে ধরতে একটি নারী ইউনিট প্রতিষ্ঠা করে। মো কমান্ডার হওয়ার আগে সপ্তাহব্যাপী প্রশিক্ষণ নেন। এ সম্পর্কে তিনি বলেন, এটি আমার পুরো জীবনের সবচেয়ে কঠিন সময় ছিল।

তবে সব নারী সদস্য ফ্রন্টলাইনে যান না। কিছু আছেন যাদেরকে অন্যান্য দায়িত্ব দেয়া হয়। যেমন ফাঁড়ি এবং চেকপয়েন্ট পাহারা দেয়া। এখনও অন্যরা তহবিল সংগ্রহ এবং প্রশাসনিক পরিষেবাগুলির মতো সহায়ক কাজগুলি সম্পাদন করে। কেউ কেউ অস্ত্র সামলাতে চায় না। তবুও, তারা বিভিন্নভাবে এই বিপ্লবকে সাহায্য করে। তারা সামরিক শাসনের অধীনে দুর্ভোগ থেকে অনুপ্রেরণা পায়।

তবে একজন নারী ইউনিট কমান্ডার হিসাবে মো পুরুষ যোদ্ধাদের সমান পদে পৌঁছানোর জন্য কাজ করছেন। তিনি বলেন, যখন আমি ফ্রন্টলাইনে যাই, আমি চাই না আমার পুরুষ কমরেডরা আমাকে বোঝা হিসেবে দেখুক। যোদ্ধাদের নিজেদের জীবনযাত্রার খরচও দিতে হয়। যদিও মো জানান যে তিনি ব্যাটালিয়ন থেকে মাসিক ভাতা পান। অতিরিক্ত অর্থ উপার্জনের জন্য তিনি ডিউটিতে না থাকার সময় ছোটখাট কাজও করেন। এরমধ্যে আছে ইউনিফর্ম সেলাই করা। কখনও কখনও তাকে তার বাবা-মাকেও অর্থ পাঠাতে হয়। অন্যান্য সদস্যদের অধিকাংশই একই কাজ করে বলে জানান তিনি।

তিনি বলেন, আমরা শুধুমাত্র সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করছি না, আমরা নারীর অধিকারের জন্যও লড়াই করছি। কেএনডিএফে যোগ দেয়া নারীরা তাদের মর্যাদা এবং অধিকারের পক্ষে কথা বলতে শিখছে। তাই এ যুদ্ধ শেষ হলেও আমরা নারী অধিকারের পক্ষে লড়াই চালিয়ে যাব, নারীদের পাশে দাড়াব।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

Popular Post

পঞ্চম শ্রেণির বৃত্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের দাবিতে মতলবে মানববন্ধন ও স্বারকলিপি প্রদান

মিয়ানমারে জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ লড়ছে যেসব নারীরা

Update Time : 10:56:08 am, Monday, 5 February 2024

এক সময় স্কুল শিক্ষিকা ছিলেন ২৬ বছরের অ্যাঞ্জেলিক মো। কিন্তু এখন তিনি একদল নারী সেনাদের ইউনিট কম্যান্ডার। তার স্বামীকে ধরে নিয়েগেছে জান্তা বাহিনী। তার সন্তানকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। তাদের গ্রাম জ্বালিয়ে দিয়েছে তারা। তিনি ‘কারেনি ন্যাশনালিটিস ডিফেন্স ফোর্স’ বা কেএনডিএফ বাহিনীর সদস্য। মিয়ানমারের পূর্বাঞ্চলীয় কায়াহ প্রদেশে জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিদ্রোহ গড়ে তুলেছে এই বাহিনী।

মো বলেন, আমি বেশ কয়েকবার ফ্রন্টলাইনে গিয়েছি। আমার মনে আছে, আমি একবার জান্তা সেনাদের থেকে মাত্র ৫০ মিটার দূর থেকে যুদ্ধ করছিলাম। আমাদের যোদ্ধারা তাদের আগেই দেখে ফেলে এবং গুলি চালায়। যদি আমরা আগে তাদের না দেখতাম তাহলে নিশ্চিতভাবেই আমাদের সবাইকে মরতে হতো।

জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা বাহিনীগুলোর মধ্যে কেএনডিএফ শক্তির বিচারে প্রথম দিকে থাকবে। মূলত স্থানীয় তরুণদের নিয়ে এই বাহিনী গঠিত। এছাড়া মিয়ানমারের জাতিগত বিদ্রোহী গ্রুপ কারেনি আর্মিও এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। এই যুদ্ধে যোগ দেয়ার আগে মো একটি পাবলিক স্কুলে পাঁচ বছর ধরে কাজ করেন। এসব যুদ্ধারা মুলত: সব হারিয়েছে জান্তা বাহিনীর হাতে। সন্তান, স্বামী এবং কি বাড়ী ঘর। এখন তারা দেশেকে বাঁচাতে যুদ্ধে নাম লিখিয়েছে।

সামরিক বাহিনী বিদ্রোহীদের দমনে প্রথম থেকেই কঠিন পথে হেটেছে। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে ক্ষমতা দখলের পর তারা অন্তত ৪ হাজার ২০০ বেসামরিক নাগরিককে হত্যা করেছে। বন্দী করেছে ২০ হাজারের বেশি। মো প্রাথমিকভাবে সশস্ত্র প্রতিরোধে যোগ দিতে অনিচ্ছুক ছিলেন। তার বন্ধুরা তাকে বারবার আহ্বান জানালেও তিনি আগ্রহী ছিলেন না। যুদ্ধ এবং বিমান হামলার তীব্রতা বেড়ে যাওয়ার পরেও তিনি শিক্ষকতা চালিয়ে যান। কিন্তু দিন দিন পরিস্থিতি আরও কঠিন হতে থাকে। এক পর্যায়ে তিনি অস্ত্র হাতে তুলে নেয়ার সিদ্ধান্ত নেন।

মিয়ানমারের অনেক তরুণীই এই কাজ করেছেন। তারা একেকজন একেক ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে এসেছেন। কেউ চিকিৎসক, কেউবা নার্স, শিক্ষক, গৃহিণী, বিক্রয়কর্মী ও সরকারী কর্মচারী। কেএনডিএফ বলছে তাদের প্রায় ৬০০ নারী যোদ্ধা রয়েছে। ২০২২ সালের মে মাসে কেএনডিএফ সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে সংগ্রামে নারীডের অংশগ্রহণকে তুলে ধরতে একটি নারী ইউনিট প্রতিষ্ঠা করে। মো কমান্ডার হওয়ার আগে সপ্তাহব্যাপী প্রশিক্ষণ নেন। এ সম্পর্কে তিনি বলেন, এটি আমার পুরো জীবনের সবচেয়ে কঠিন সময় ছিল।

তবে সব নারী সদস্য ফ্রন্টলাইনে যান না। কিছু আছেন যাদেরকে অন্যান্য দায়িত্ব দেয়া হয়। যেমন ফাঁড়ি এবং চেকপয়েন্ট পাহারা দেয়া। এখনও অন্যরা তহবিল সংগ্রহ এবং প্রশাসনিক পরিষেবাগুলির মতো সহায়ক কাজগুলি সম্পাদন করে। কেউ কেউ অস্ত্র সামলাতে চায় না। তবুও, তারা বিভিন্নভাবে এই বিপ্লবকে সাহায্য করে। তারা সামরিক শাসনের অধীনে দুর্ভোগ থেকে অনুপ্রেরণা পায়।

তবে একজন নারী ইউনিট কমান্ডার হিসাবে মো পুরুষ যোদ্ধাদের সমান পদে পৌঁছানোর জন্য কাজ করছেন। তিনি বলেন, যখন আমি ফ্রন্টলাইনে যাই, আমি চাই না আমার পুরুষ কমরেডরা আমাকে বোঝা হিসেবে দেখুক। যোদ্ধাদের নিজেদের জীবনযাত্রার খরচও দিতে হয়। যদিও মো জানান যে তিনি ব্যাটালিয়ন থেকে মাসিক ভাতা পান। অতিরিক্ত অর্থ উপার্জনের জন্য তিনি ডিউটিতে না থাকার সময় ছোটখাট কাজও করেন। এরমধ্যে আছে ইউনিফর্ম সেলাই করা। কখনও কখনও তাকে তার বাবা-মাকেও অর্থ পাঠাতে হয়। অন্যান্য সদস্যদের অধিকাংশই একই কাজ করে বলে জানান তিনি।

তিনি বলেন, আমরা শুধুমাত্র সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করছি না, আমরা নারীর অধিকারের জন্যও লড়াই করছি। কেএনডিএফে যোগ দেয়া নারীরা তাদের মর্যাদা এবং অধিকারের পক্ষে কথা বলতে শিখছে। তাই এ যুদ্ধ শেষ হলেও আমরা নারী অধিকারের পক্ষে লড়াই চালিয়ে যাব, নারীদের পাশে দাড়াব।