ঢাকা 12:55 am, Thursday, 24 July 2025
আঘান হানলে দখলদারেরা নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে

পারমাণবিক কর্মসূচি বন্ধ করার প্রশ্নই আসেনা, যেকোন পরিস্থিতির জন্য ইরান প্রস্তুত

ছবি-সংগৃহিত।

পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ন্ত্রণ ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা ভেস্তে যাওয়ার জেরে তাদের মিত্র ইসরায়েলের সঙ্গে ভয়াবহ এক সংঘাতে জড়িয়ে পড়েছিল ইরান। ১২ দিনের ওই সংক্ষিপ্ত যুদ্ধে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়েছে দেশটি। এমনকি যুদ্ধের শেষ দিকে ইসরায়েলের পাশাপাশি ইরানে ভয়ংকর এক হামলা চালিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রও। এখন আবার পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ন্ত্রণ ইস্যুতে ইরানকে আলোচনার টেবিলে ফেরাতে চাপ দিয়ে যাচ্ছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আগামী ২৫ জুলাই এ ইস্যুতে ইউরোপের তিন দেশ ফ্রান্স, জার্মানি ও ব্রিটেনের সঙ্গে সংলাপে বসতে যাচ্ছে ইরান।

তবে, এর আগেই দেশটির প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান জানিয়ে দিয়েছেন, পারমাণবিক কর্মসূচি চালিয়ে যাবে তার দেশ। আর তা করতে গিয়ে যেকোনও সম্ভাব্য যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতও আছে তেহরান।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরাকে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে এসব কথা জানান তিনি। বুধবার (২৩ জুলাই) সাক্ষাৎকারটি প্রকাশিত হয়েছে।

সেখানে স্পষ্টভাবে মাসুদ পেজেশকিয়ান বলেছেন, আন্তর্জাতিক আইনের সীমার মধ্যে থেকে পারমাণবিক কর্মসূচি চালিয়ে যাবে তেহরান। ইসরায়েল যদি আবার হামলা করে, আমরা এবার আরও গভীরে আঘাত হানব। আমাদের সশস্ত্র বাহিনী প্রস্তুত।

তিনি আরও বলেন, ১২ দিনের যুদ্ধের পর সংঘর্ষ বন্ধ হলেও আমরা এর স্থায়িত্ব নিয়ে আশাবাদী নই। ইসরায়েল আমাদের ক্ষতি করেছে, আমরাও তাদের ঘায়েল করেছি। তারা তাদের ক্ষয়ক্ষতি লুকিয়ে রাখছে।

গত মাসে ইসরায়েলের সঙ্গে ইরানের যুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের পক্ষ নিয়ে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায়। ওই হামলায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিয়ে পশ্চিমা প্রতিবেদনে বিভ্রান্তি তৈরি হলেও ইরান বলছে, তাদের পরিকাঠামো এখনও সচল।

পেজেশকিয়ান বলেন, আমাদের পারমাণবিক সক্ষমতা কোনও স্থাপনায় সীমাবদ্ধ নয়, তা রয়েছে আমাদের বিজ্ঞানীদের মনে।

এসময় তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বক্তব্যকে ‘ভ্রান্ত’ বলে আখ্যা দেন। ট্রাম্প বলেছিলেন, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ধ্বংস হয়ে গেছে। তবে, ইরানের প্রেসিডেন্ট জোর দিয়ে বলেছেন, আমরা পারমাণবিক অস্ত্র চাই না। এটি আমাদের রাজনৈতিক, ধর্মীয় ও মানবিক অবস্থান। তবে পারমাণবিক প্রযুক্তি উন্নয়ন আমাদের অধিকার এবং তা আমরা চালিয়ে যাব।

সাক্ষাৎকারে পেজেশকিয়ান ইসরায়েলের একটি সরাসরি হত্যাচেষ্টার প্রসঙ্গও তোলেন। গত ১৫ জুন তেহরানে জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের এক বৈঠকে তাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছিল বলে জানান ইরানি প্রেসিডেন্ট। এতে তিনি সামান্য আহত হন। প্রেসিডেন্ট বলেন, এটা ছিল আমাদের রাজনৈতিক নেতৃত্বকে উৎখাতের পরিকল্পনার অংশ, তবে তারা ব্যর্থ হয়েছে।

আল জাজিরাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের হামলার জবাবে আল উদেইদ ঘাঁটিতে ইরানের পাল্টা হামলা কাতারের বিরুদ্ধে ছিল না। কাতার আমাদের বন্ধুপ্রতিম দেশ। আমরা কাতার রাষ্ট্র নয়, বরং সেখানে থাকা মার্কিন ঘাঁটি লক্ষ্য করেই আঘাত হেনেছি।

এদিকে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি সোমবার ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, তেহরান পারমাণবিক কার্যক্রম নিয়ে আলোচনার জন্য প্রস্তুত। তবে তা হতে হবে পারস্পরিক স্বার্থ ও সমতার ভিত্তিতে। তিনি জানান, ইরানের পারমাণবিক সংস্থা বর্তমানে ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা পর্যালোচনা করছে এবং শিগগিরই আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা (আইএইএ)-কে এ সম্পর্কে অবহিত করা হবে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

Popular Post

ডিউটি জরুরি বিভাগে, কিন্তু মতলবে কর্তব্যরত ডিউটি ডাক্তার ডিউটি করেন প্রাইভেট হাসপাতালে 

আঘান হানলে দখলদারেরা নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে

পারমাণবিক কর্মসূচি বন্ধ করার প্রশ্নই আসেনা, যেকোন পরিস্থিতির জন্য ইরান প্রস্তুত

Update Time : 05:31:28 pm, Wednesday, 23 July 2025

পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ন্ত্রণ ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা ভেস্তে যাওয়ার জেরে তাদের মিত্র ইসরায়েলের সঙ্গে ভয়াবহ এক সংঘাতে জড়িয়ে পড়েছিল ইরান। ১২ দিনের ওই সংক্ষিপ্ত যুদ্ধে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়েছে দেশটি। এমনকি যুদ্ধের শেষ দিকে ইসরায়েলের পাশাপাশি ইরানে ভয়ংকর এক হামলা চালিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রও। এখন আবার পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ন্ত্রণ ইস্যুতে ইরানকে আলোচনার টেবিলে ফেরাতে চাপ দিয়ে যাচ্ছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আগামী ২৫ জুলাই এ ইস্যুতে ইউরোপের তিন দেশ ফ্রান্স, জার্মানি ও ব্রিটেনের সঙ্গে সংলাপে বসতে যাচ্ছে ইরান।

তবে, এর আগেই দেশটির প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান জানিয়ে দিয়েছেন, পারমাণবিক কর্মসূচি চালিয়ে যাবে তার দেশ। আর তা করতে গিয়ে যেকোনও সম্ভাব্য যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতও আছে তেহরান।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরাকে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে এসব কথা জানান তিনি। বুধবার (২৩ জুলাই) সাক্ষাৎকারটি প্রকাশিত হয়েছে।

সেখানে স্পষ্টভাবে মাসুদ পেজেশকিয়ান বলেছেন, আন্তর্জাতিক আইনের সীমার মধ্যে থেকে পারমাণবিক কর্মসূচি চালিয়ে যাবে তেহরান। ইসরায়েল যদি আবার হামলা করে, আমরা এবার আরও গভীরে আঘাত হানব। আমাদের সশস্ত্র বাহিনী প্রস্তুত।

তিনি আরও বলেন, ১২ দিনের যুদ্ধের পর সংঘর্ষ বন্ধ হলেও আমরা এর স্থায়িত্ব নিয়ে আশাবাদী নই। ইসরায়েল আমাদের ক্ষতি করেছে, আমরাও তাদের ঘায়েল করেছি। তারা তাদের ক্ষয়ক্ষতি লুকিয়ে রাখছে।

গত মাসে ইসরায়েলের সঙ্গে ইরানের যুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের পক্ষ নিয়ে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায়। ওই হামলায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিয়ে পশ্চিমা প্রতিবেদনে বিভ্রান্তি তৈরি হলেও ইরান বলছে, তাদের পরিকাঠামো এখনও সচল।

পেজেশকিয়ান বলেন, আমাদের পারমাণবিক সক্ষমতা কোনও স্থাপনায় সীমাবদ্ধ নয়, তা রয়েছে আমাদের বিজ্ঞানীদের মনে।

এসময় তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বক্তব্যকে ‘ভ্রান্ত’ বলে আখ্যা দেন। ট্রাম্প বলেছিলেন, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ধ্বংস হয়ে গেছে। তবে, ইরানের প্রেসিডেন্ট জোর দিয়ে বলেছেন, আমরা পারমাণবিক অস্ত্র চাই না। এটি আমাদের রাজনৈতিক, ধর্মীয় ও মানবিক অবস্থান। তবে পারমাণবিক প্রযুক্তি উন্নয়ন আমাদের অধিকার এবং তা আমরা চালিয়ে যাব।

সাক্ষাৎকারে পেজেশকিয়ান ইসরায়েলের একটি সরাসরি হত্যাচেষ্টার প্রসঙ্গও তোলেন। গত ১৫ জুন তেহরানে জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের এক বৈঠকে তাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছিল বলে জানান ইরানি প্রেসিডেন্ট। এতে তিনি সামান্য আহত হন। প্রেসিডেন্ট বলেন, এটা ছিল আমাদের রাজনৈতিক নেতৃত্বকে উৎখাতের পরিকল্পনার অংশ, তবে তারা ব্যর্থ হয়েছে।

আল জাজিরাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের হামলার জবাবে আল উদেইদ ঘাঁটিতে ইরানের পাল্টা হামলা কাতারের বিরুদ্ধে ছিল না। কাতার আমাদের বন্ধুপ্রতিম দেশ। আমরা কাতার রাষ্ট্র নয়, বরং সেখানে থাকা মার্কিন ঘাঁটি লক্ষ্য করেই আঘাত হেনেছি।

এদিকে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি সোমবার ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, তেহরান পারমাণবিক কার্যক্রম নিয়ে আলোচনার জন্য প্রস্তুত। তবে তা হতে হবে পারস্পরিক স্বার্থ ও সমতার ভিত্তিতে। তিনি জানান, ইরানের পারমাণবিক সংস্থা বর্তমানে ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা পর্যালোচনা করছে এবং শিগগিরই আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা (আইএইএ)-কে এ সম্পর্কে অবহিত করা হবে।