মামলা চলমান অবস্থায় সম্পত্তি ক্রয়-বিক্রয় ও পরবর্তিতে আদালতের নিষেধাজ্ঞা স্বত্ত্বেও বিরোধকৃত জমিতে অনধিকার প্রবেশ, জবরদখল করে স্থাপনা নির্মাণের ঘটনায় অবশেষে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে রিসিভার নিয়োগ করেন বিজ্ঞ আদালত। দায়িত্ব পেয়ে থানা পুলিশ উভয় পক্ষকে আদালতের আদেশনামা জানিয়ে ও রিসিভারের সাইনবোর্ড সাঁটিয়ে দিয়েছেন ঘটনাস্থলে। ভুক্তভোগী আদালতের আদেশ মানলেও প্রতিপক্ষরা তা মানতে অনিহা প্রকাশ করে। রাতের আঁধারে পুলিশের সাঁটানো সাইনবোর্ড সরিয়ে ফেলে। আদালতের এ আদেশ অমান্যকারীরা যে কোন মুহুর্তে বড় ধরণের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়তে পারে বলে শঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। ঘটনাটি চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জের চরদুঃখিয়া পশ্চিম ইউনিয়নের লড়াইচর গ্রামের।
ঘটনা সূত্রে জানা যায়, ভুক্তভোগী মিজানুর রহমান স্থানীয় বাসিন্দা লেদু মিয়ার কাছ থেকে ৩০ শতক জমি ক্রয় করে। জমি কেনার পর থেকেই লেদু মেয়ার অপর ভাই তার নিজের জমি দাবি করে সে নিজে আদালতে মামলা দায়ের করেন, মামলা চলমান অবস্থায় সে নিজেই প্রতিবেশি সাইফুল ইসলামের কছে আংশিক সম্পত্তি বিক্রয় করে দেয়। এনিয়ে দীর্ঘদিন যাবত তাদের বিরোধ চলে আসছে।
অবশেষে ভুক্তভোগী মো. মিজানুর রহমানের আবেদনের প্রেক্ষিতে চাঁদপুরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালত গত বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) বিরোধকৃত সম্পত্তিতে ফরিদগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ শাহ আলমকে রিসিভার নিয়োগের এ নির্দেশনা প্রদান করেন। পরে আদালতের নিদের্শনা মোতাবেক শুক্রবার (১৮ জুলাই) থানা পুলিশের একটি দল আদালতের নিদের্শনা বাস্তবায়নের জন্য ঘটনাস্থলে যেয়ে উভয় পক্ষকে আদালতের আদেশনামা হস্তান্তর করে। একপর্যায়ে প্রতিপক্ষের বাঁধার মুখে পড়ে পুলিশ। পরে স্থানীয়দের সহায়তায় পুলিশ প্রতিপক্ষকে শান্ত রেখে রিসিভার নিয়োগের সাইবোর্ড টানিয়ে দেয় এবং তফসিলের চৌহদ্দি মোতাবেক লাল নিশানা স্থাপন ও নালিশি সম্পত্তিতে থাকা একটি দোকান সিলগালা করে দেয়। পরেরদিন গভীররাতে প্রতিপক্ষরা রিসিভারের সাইনবোর্ড ও লাল নিশানা সরিয়ে ফেলে এবং দোকানের সিলগালা নষ্ট করে দেয়।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী মো. মিজানুর রহমান জানান, আমার প্রতিপক্ষ সাইফুল ইসলাম, ও শাহাবুদ্দিন প্রকাশে সাবু উল্লাগং তাদের লোকজন অযথা আদালতের আদেশ বাস্তবায়নকালে পুলিশকে বাঁধা প্রদান করে। পুলিশ আদালতের আদেশ বাস্তবায়ন করে চলে গেলে রাতের আঁধারে সাইনবোর্ড গাছ থেকে নামিয়ে ফেলে ও লাল নিশানা সরিয়ে ফেলে এবং সিলগালা বিনষ্ট করে দেয় প্রতিপক্ষরা। যা আদালতের আদেশের অবমাননা।
তিনি আরো বলেন, আমি তাদের অত্যাচারে জর্জরিত। তাদের বারংবার বলেছি মামলা যেহেতু আদালতে রয়েছে, আদালতের নির্দেশ আমি মেনে নিবো। কিন্তু তারা কোন কিছুকেই তোয়াক্কা করছে না। আমার নিজের দায়ের করা ১৪৫ ধারা এমনকি তাদের দায়ের করা ১৪৫ধারাও তারা ভঙ্গ করে কাজ করেছে। বাধ্য হয়ে আমি আদালতকে জানালে আদালত রিসিভার নিয়োগ করেন।
এদিকে সাইফুল বলেন, মিজানুর রহমান শুধু শুধু আদালতে যায়, আদালতকে মিসগাইড করছে।
রিসিভার নিয়োগের বিষয়টি নিশ্চিত করে ফরিদগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ শাহ আলম বলেন, আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। সরকারি কাজে বাঁধা দিলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
উল্লেখ্য, আদালতে নিষেধাজ্ঞার আবেদনে দেখা গেছে, ওই ইউনিয়নের ১২৩ নং লড়াইচর মৌজার বি.এস ৭২৮, নং নামজারি জমাখারিজ-৯৬৯ নং খতিয়ানভুক্ত ৬৯৮ দাগে.০৭ একর, বি.এস-৫৯৭নং নামজারি জমাখারিজ-৯৬৯নং খতিয়ানভুক্ত ৬৯৯ দাগে.০৪ একর এবং বি.এস-৫৯৭ নং নামজারি জমাখারিজ-৯৬৯ নং খতিয়ানভুক্ত ৭০০ দাগে.০৪ একর একুনে মোঃ০.১৫ একর ভূমি। যাহার উত্তরে- পারভেজ গং, দক্ষিণে- শামছু গং, পূর্বে-শরাফ উদ্দিন গং এবং পশ্চিমে-মান্নান গং। যা দখল করে বিবাদীরা স্থাপনা নির্মাণ করছেন বলে অভিযোগ করা হয়।