অনলাইন ডেস্ক:
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের গ্রাফিতি মুছে তার উপর ধর্ষণ বিরোধী গ্রাফিতি করার অভিযোগে করা মামলায় ছাত্র ইউনিয়ন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের সভাপতি অমর্ত্য রায় ও সম্পাদক ঋদ্ধ অনিন্দ্য গাঙ্গুলির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত।
বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) মামলার অভিযুক্ত বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
২০২৩ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ও মানবিকী অনুষদ ভবনের দেয়ালে পূর্বে আঁকা শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি মুছে একটি ধর্ষণ বিরোধী চিত্র অঙ্কন করে ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের নেতাকর্মীরা। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে তৎকালীন ছাত্রলীগ নেতাদের চাপের মুখে ছাত্র ইউনিয়নের দুই নেতাকে বহিষ্কার করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সেই সঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করে।
সংশ্লিষ্ট থানা সূত্রে জানা গেছে, ৫ আগস্টের আগেই তাদের বিরুদ্ধে করা অভিযোগ মামলায় রূপান্তর হয়েছে। কোর্ট থেকে তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। আশুলিয়া থানার সব নথি পুরে যাওয়ায় বিস্তারিত তথ্য জানা যায়নি।
এ বিষয়ে ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের সভাপতি অমর্ত্য রায় বলেন, শেখ মুজিবকে তারা (আওয়ামী লীগ) সব সময় কাল্ট ফিগার বানানোর চেষ্টা করেছে। সব অন্যায় অপকর্ম শেখ মুজিবকে দিয়ে ঢাকার চেষ্টা করেছে। তখন ধর্ষণ কাণ্ডের ঘটনায় শেখ মুজিবের ছবি মুছে আমরা ধর্ষণ বিরোধী গ্রাফিতি এঁকেছিলাম। সেই ঘটনায় এখন এসে মামলা হওয়া দুঃখজনক। পাঁচ আগস্ট পরবর্তী বাংলাদেশে এগুলো কল্পনাই করা যায় না। এ ঘটনায় আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকেই দায়ী করবো। কারণ এখন পর্যন্ত তারা আমাদের অযৌক্তিক বহিষ্কারাদেশ তোলে নেয়নি। মামলা প্রত্যাহার করেনি।
সাধারণ সম্পাদক ঋদ্ধ অনিন্দ্য গাঙ্গুলি বলেন, অমর্ত্য এবং আমার নামে অ্যারেস্ট ওয়ারেন্ট জারি করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর গ্রাফিতি মুছে ধর্ষণবিরোধী গ্রাফিতি করায় বিগত সরকারের আমলে ছাত্রলীগের দাবির মুখে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ আনা হয় আমাদের বিরুদ্ধে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমাদের দুই জনকে এক বছরের জন্য বহিষ্কার করে এবং রাষ্ট্রীয় আইনে মামলা করে। ছাত্রলীগ, বিগত ভিসি-প্রক্টর, নিরাপত্তা প্রধান পালিয়ে গেলেও তাদের করা মামলা আর বহিষ্কার প্রত্যাহার হয়নি। গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী নতুন প্রশাসনের কাছে বারবার বহিষ্কার ও মামলা প্রত্যাহার করতে বলার পরেও তারা কর্ণপাত করেননি, উল্টো আমাদের বহিষ্কার ও মামলার দাবিতে আন্দোলন করা আওয়ামী সৈনিক সোহেল আহমেদকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসির দায়িত্বে পুরস্কৃত করা হয়েছে। গত সিন্ডিকেটে এই বহিষ্কার ও মামলা বিষয়ে কোনও এজেন্ডাই রাখা হয়নি। এর থেকে আপনারা বুঝবেন, নতুন বাংলাদেশের নতুন প্রশাসনেও হাসিনার দোসরদের কেন রাখা হয়েছে, বুঝবেন কেন কী উদ্দেশ্যে কাদের অভিযোগগুলো ডিসমিস করা হচ্ছে আর কাদেরগুলো করা হচ্ছে না। যে প্রশাসন তার প্রশাসনিক ভবন থেকে বঙ্গবন্ধুর ছবি নামানো নিয়ে এত উচ্ছ্বসিত, সে বঙ্গবন্ধুর গ্রাফিতি মোছার মামলা কেন এখনও চলে?
এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জাবি শাখার সদস্য সচিব তৌহিদ সিয়াম বলেন, শেখ মুজিবের গ্রাফিতি মুছে ফেলার মামলায় জাবি ছাত্র ইউনিয়নের একাংশের সভাপতি অমর্ত্য রায় ও সাধারণ সম্পাদক ঋদ্ধ অনিন্দ্য গাঙ্গুলি ভাইয়ের গ্রেফতারি পরোয়ানা অতিদ্রুত বাতিল করা হবে। কোনও গ্রেফতার হবে না। মামলা ডিসমিস করার বিষয়েও আইজিপির সঙ্গে কথা হয়েছে। পুরো বিষয়টি আমাদের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ ভাই নিজে নিশ্চিত করেছেন। (ঢাকা ট্রিবিউন)