ঢাকা 12:37 am, Friday, 18 July 2025

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে পরিচয়, অবশেষে একে অন্যের জীবন সঙ্গী

  • Reporter Name
  • Update Time : 12:31:42 pm, Saturday, 28 December 2024
  • 35 Time View

ছবি-সংগৃহিত।

বরগুনায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নিয়ে মীর রিজন মাহমুদ নিলয়ের সঙ্গে পরিচয় হয় একই জেলার ফৌজিয়া তাসনীন আনিকার। ভালো লাগা থেকে শুরু হয় প্রেম, অবশেষে হলেন একে অন্যের জীবন সঙ্গী।

শুক্রবার (২৭ ডিসেম্বর) বিকেলে আন্দোলনের প্রায় ৫ মাস পর বিয়ের পিঁড়িতে বসে প্রেমের পূর্ণতা দেন নিলয় ও আনিকা।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শুধু নতুন বাংলাদেশ নয়, বরগুনায় একটি নতুন সম্পর্কের উন্মোচন হয়েছে নিলয় ও আনিকার। এ আন্দোলনে দেশের সহস্র মানুষ শহীদ হলেও দুজনে খুঁজে পেয়েছেন নিজেদের পছন্দের জীবনসঙ্গী। তবে দেশের স্বার্থে যেকোনো প্রয়োজনে আবারও সদা প্রস্তুত থাকবেন বলে জানিয়েছেন তারা। আন্দোলন চলাকালীন সময়ে সবার সঙ্গে একত্রে থাকলেও গত ৫ আগস্ট থেকে দু’জনার ভালো লাগা শুরু হয়। পরবর্তীতে ৭ আগস্ট ভালোবাসা প্রকাশের পর ২৫ আগস্ট দুজনের সম্পর্কের বিষয়টি তাদের পরিবারকে জানান। পরে উভয় পরিবারের সম্মতিতে প্রণয়ে রূপ নেয় তাদের প্রেম।

একদিকে আন্দোলনের ফলে অনেকেই তাদের স্বজন হারিয়েছেন, অপরদিকে নতুন একটি পরিবারও গঠন হয়েছে। ফৌজিয়া তাসনীন আনিকা বলেন, আন্দোলনের সময় নিলয়ের সঙ্গে আমার পরিচয় হয়। ওই সময় আন্দোলন নিয়ে বিভিন্ন বিষয়ে কথা হতো। তখন সাহস এবং সততা দেখে নিলয়ের ওপর আমি দুর্বল হই। যেখানে ওর আত্মীয়-স্বজনের মধ্যে অনেকেই বর্তমান নিষিদ্ধ সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিল, তাদের মতামতের বিরুদ্ধে গিয়ে আমাদের সঙ্গে আন্দোলন করেছে। এ ছাড়া অন্য একটি সংগঠন তাদের ব্যানারে নিলয়কে আন্দোলনে অংশ নিতে বললেও সে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গেই আন্দোলনে যুক্ত হয়। ওর ওপর দুর্বল হওয়ার মূল কারণই হচ্ছে এমন সততা। পরবর্তীতে গত ৫ আগস্ট বিজয় মিছিলে আমার প্রতি আলাদা কেয়ার দেখে ওর প্রতি দুর্বলতা আরও বেড়ে যায়। পরে ৭ আগস্ট আমাকে প্রেমের প্রস্তাব না দিয়ে সরাসরি বিয়ের প্রস্তাব দেন নিলয়।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাইলে আনিকা বলেন, আমরা এখনও শিক্ষার্থী। আমাদের প্রথম পরিকল্পনা হচ্ছে আমাদের একত্রে সফল হতে হবে। আমরা দুজনে একত্রিত থেকে সামনের দিকে এগিয়ে যাব। এ ছাড়া এখনও নিষিদ্ধ সংগঠনের অনেকে বলে আমরা কীভাবে আন্দোলনে গেলাম। আমার কথা হচ্ছে যদি একটি দল অন্যায় করে, সে অন্যায়কে সাপোর্ট দেওয়া কি আমার দেশকে ভালোবাসা? অবশ্যই না। আমরা সবসময় নিরপেক্ষ থেকে দেশকে ভালোবাসব। কোনো দল অথবা বর্তমান যে সরকার রয়েছে তারাও যদি কোনো ভুল করে আমরা তারও বিরুদ্ধে যাব, শুধু মাত্র দেশের জন্য।

মীর রিজন মাহমুদ নিলয় বলেন, আনিকার সঙ্গে আন্দোলনের মাধ্যমেই পরিচয় হয়। এমনিতে ওকে আগে দূর থেকে চিনলেও কখনও কথা হয়নি। আন্দোলন চলাকালে সবার সঙ্গেই আমার কথা হতো। সবাইকে সাহস দিয়ে আন্দোলন বেগবান করার জন্য বলতাম। এ কারণেই ওর সঙ্গে আমার কথা বলা শুরু হয়। তবে ওই সময়ে আমাদের কোনো প্রেমের সম্পর্ক ছিল না। গত ৫ আগস্ট যখন একত্রে বিজয় মিছিলে আনন্দ উল্লাস করছিলাম তখন আমাদের মধ্যে ভালো লাগা শুরু হয়।

বিশেষ কি কারণে আনিকাকে ভালো লেগেছে— জানতে চাইলে নিলয় বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলনে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়ার যে সাহসিকতা ওর মধ্যে ছিল এটি আমাকে মুগ্ধ করেছে। ওই সময়ে ফ্যাসিস্ট হাসিনার বিরুদ্ধে সাহস নিয়ে আন্দোলনে নেমে যে দেশকে ভালোবাসতে পারে সে মানুষকেও ভালোবাসতে পারে।

মীর রিজন মাহমুদ নিলয় বরগুনা পৌরসভার আমতলারপাড় এলাকার মরহুম মীর মোয়াজ্জেম হোসেনের ছেলে। বর্তমানে সে আনোয়ার খান মর্ডান ইউনিভার্সিটিতে বিবিএ ৬ষ্ঠ সেমিস্টারের শিক্ষার্থী। বরগুনা পৌরসভার কলেজ রোড এলাকার মনোয়ারুল ইসলাম শামীমের মেয়ে ফৌজিয়া তাসনীন আনিকা সরকারি ব্রজমোহন কলেজের রসায়ন বিভাগের অনার্স প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। (বিডি লাইভ ২৪.কম)

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

Popular Post

হাজীগঞ্জ পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের দেয়ালে দেয়ালে আঁকা হচ্ছে ‘জুলাই অভ্যুত্থান’র গ্রাফিতি

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে পরিচয়, অবশেষে একে অন্যের জীবন সঙ্গী

Update Time : 12:31:42 pm, Saturday, 28 December 2024

বরগুনায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নিয়ে মীর রিজন মাহমুদ নিলয়ের সঙ্গে পরিচয় হয় একই জেলার ফৌজিয়া তাসনীন আনিকার। ভালো লাগা থেকে শুরু হয় প্রেম, অবশেষে হলেন একে অন্যের জীবন সঙ্গী।

শুক্রবার (২৭ ডিসেম্বর) বিকেলে আন্দোলনের প্রায় ৫ মাস পর বিয়ের পিঁড়িতে বসে প্রেমের পূর্ণতা দেন নিলয় ও আনিকা।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শুধু নতুন বাংলাদেশ নয়, বরগুনায় একটি নতুন সম্পর্কের উন্মোচন হয়েছে নিলয় ও আনিকার। এ আন্দোলনে দেশের সহস্র মানুষ শহীদ হলেও দুজনে খুঁজে পেয়েছেন নিজেদের পছন্দের জীবনসঙ্গী। তবে দেশের স্বার্থে যেকোনো প্রয়োজনে আবারও সদা প্রস্তুত থাকবেন বলে জানিয়েছেন তারা। আন্দোলন চলাকালীন সময়ে সবার সঙ্গে একত্রে থাকলেও গত ৫ আগস্ট থেকে দু’জনার ভালো লাগা শুরু হয়। পরবর্তীতে ৭ আগস্ট ভালোবাসা প্রকাশের পর ২৫ আগস্ট দুজনের সম্পর্কের বিষয়টি তাদের পরিবারকে জানান। পরে উভয় পরিবারের সম্মতিতে প্রণয়ে রূপ নেয় তাদের প্রেম।

একদিকে আন্দোলনের ফলে অনেকেই তাদের স্বজন হারিয়েছেন, অপরদিকে নতুন একটি পরিবারও গঠন হয়েছে। ফৌজিয়া তাসনীন আনিকা বলেন, আন্দোলনের সময় নিলয়ের সঙ্গে আমার পরিচয় হয়। ওই সময় আন্দোলন নিয়ে বিভিন্ন বিষয়ে কথা হতো। তখন সাহস এবং সততা দেখে নিলয়ের ওপর আমি দুর্বল হই। যেখানে ওর আত্মীয়-স্বজনের মধ্যে অনেকেই বর্তমান নিষিদ্ধ সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিল, তাদের মতামতের বিরুদ্ধে গিয়ে আমাদের সঙ্গে আন্দোলন করেছে। এ ছাড়া অন্য একটি সংগঠন তাদের ব্যানারে নিলয়কে আন্দোলনে অংশ নিতে বললেও সে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গেই আন্দোলনে যুক্ত হয়। ওর ওপর দুর্বল হওয়ার মূল কারণই হচ্ছে এমন সততা। পরবর্তীতে গত ৫ আগস্ট বিজয় মিছিলে আমার প্রতি আলাদা কেয়ার দেখে ওর প্রতি দুর্বলতা আরও বেড়ে যায়। পরে ৭ আগস্ট আমাকে প্রেমের প্রস্তাব না দিয়ে সরাসরি বিয়ের প্রস্তাব দেন নিলয়।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাইলে আনিকা বলেন, আমরা এখনও শিক্ষার্থী। আমাদের প্রথম পরিকল্পনা হচ্ছে আমাদের একত্রে সফল হতে হবে। আমরা দুজনে একত্রিত থেকে সামনের দিকে এগিয়ে যাব। এ ছাড়া এখনও নিষিদ্ধ সংগঠনের অনেকে বলে আমরা কীভাবে আন্দোলনে গেলাম। আমার কথা হচ্ছে যদি একটি দল অন্যায় করে, সে অন্যায়কে সাপোর্ট দেওয়া কি আমার দেশকে ভালোবাসা? অবশ্যই না। আমরা সবসময় নিরপেক্ষ থেকে দেশকে ভালোবাসব। কোনো দল অথবা বর্তমান যে সরকার রয়েছে তারাও যদি কোনো ভুল করে আমরা তারও বিরুদ্ধে যাব, শুধু মাত্র দেশের জন্য।

মীর রিজন মাহমুদ নিলয় বলেন, আনিকার সঙ্গে আন্দোলনের মাধ্যমেই পরিচয় হয়। এমনিতে ওকে আগে দূর থেকে চিনলেও কখনও কথা হয়নি। আন্দোলন চলাকালে সবার সঙ্গেই আমার কথা হতো। সবাইকে সাহস দিয়ে আন্দোলন বেগবান করার জন্য বলতাম। এ কারণেই ওর সঙ্গে আমার কথা বলা শুরু হয়। তবে ওই সময়ে আমাদের কোনো প্রেমের সম্পর্ক ছিল না। গত ৫ আগস্ট যখন একত্রে বিজয় মিছিলে আনন্দ উল্লাস করছিলাম তখন আমাদের মধ্যে ভালো লাগা শুরু হয়।

বিশেষ কি কারণে আনিকাকে ভালো লেগেছে— জানতে চাইলে নিলয় বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলনে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়ার যে সাহসিকতা ওর মধ্যে ছিল এটি আমাকে মুগ্ধ করেছে। ওই সময়ে ফ্যাসিস্ট হাসিনার বিরুদ্ধে সাহস নিয়ে আন্দোলনে নেমে যে দেশকে ভালোবাসতে পারে সে মানুষকেও ভালোবাসতে পারে।

মীর রিজন মাহমুদ নিলয় বরগুনা পৌরসভার আমতলারপাড় এলাকার মরহুম মীর মোয়াজ্জেম হোসেনের ছেলে। বর্তমানে সে আনোয়ার খান মর্ডান ইউনিভার্সিটিতে বিবিএ ৬ষ্ঠ সেমিস্টারের শিক্ষার্থী। বরগুনা পৌরসভার কলেজ রোড এলাকার মনোয়ারুল ইসলাম শামীমের মেয়ে ফৌজিয়া তাসনীন আনিকা সরকারি ব্রজমোহন কলেজের রসায়ন বিভাগের অনার্স প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। (বিডি লাইভ ২৪.কম)