হাজীগঞ্জে সম্পত্তিগত বিরোধের জেরে মো. ইমান হোসেন পাটওয়ারী নামের এক ব্যাক্তিতে হত্যার অভিযোগে আপন ভাইসহ চারজনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করা হয়েছে। গত ১৯ জুন বড় ভাই ইসমাঈল হোসেন পাটওয়ারী (৬৫), তার স্ত্রী ফজিলতের নেছা (৫০), ছেলে মহিন পাটওয়ারী (৩৫) ও মেয়ে সালমা বেগমের (২৪) বিরুদ্ধে এ মামলাটি করা হয়।
ইমান পাটওয়ারীর ছেলে চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ আমলী আদালতে এ মামলাটি (নং- ৪৭৩/২০২৫) দায়ের করেন। এর আগে গত ২ জুন, সোমবার সকাল ৬টা থেকে ৭ টার মধ্যে উপজেলার বড়কুল পূর্ব ইউনিয়নের মধ্য বড়কুল গ্রামের কালা মিয়ার ছাড়া বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। ওই বাড়ির আম গাছের ডাল থেকে ফাঁস দেওয়া অবস্থায় ইমান পাটওয়ারী মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, ইমান পাটওয়ারী তার ভাই ইসমাঈল পাটওয়ারীকে ২ লাখ টাকা হাওলাত দেন। এক সপ্তাহ পর সেই টাকা ফেরৎ চাইতে গেলে তিনি টাকা দিতে অস্বীকার করেন এবং উল্টো তার সম্পত্তিতে ইমান পাটওয়ারী বসবাস করছেন বলে উল্লেখ করে আরো আড়াই লাখ টাকা দাবি করেন। অন্যথায় তার বসতভিটা দখল করে নিবেন বলে হুমকি দেন ইসমাঈল পাটওয়ারী।
ইমান পাটওয়ারী বিষয়টি এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের জানালে ক্ষিপ্ত হন ইসমাঈল পাটওয়ারী। এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এসময় ইমান পাটওয়ারীকে হত্যা ও লাশ গুম করার হুমকি দেন ইসমাঈল পাটওয়ারী। বিষয়টি নিয়ে পহেলা জুন, রোববার বিকালে তাদের মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ হয় এবং ইমান পাটওয়ারীকে হেয় প্রতিপন্ন করেন তার ভাই ইসমাঈল পাটওয়ারী।
অভিযোগে আরো উল্লেখ করা হয়, ঝগড়া-বিবাদের পরের দিন (২ জুন, সোমবার) ইমান পাটওয়ারীর মৃত্যু নিশ্চিত করে আম গাছের ডালে ঝুলিয়ে রাখেন উল্লেখিত আসামিরা। খবর পেয়ে হাজীগঞ্জ থানা পুলিশ মরদেহ উদ্ধারপূর্বক সুরতহাল প্রতিবেদন সম্পন্ন করে ময়নাতদন্তের জন্য চাঁদপুর সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। পরবর্তীতে হাজীগঞ্জ থানার ওসির পরামর্শে আদালতে মামলা করা হয়।
এ বিষয়ে ইমান পাটওয়ারীর ছেলে সোহেল ও মানিক বলেন, গত ৩০/৩২ বছর যাবৎ আমার বাবার সাথে জেডার (ইসমাঈল পাটওয়ারী) সম্পতিগত বিরোধ ছিলো। তিনি বাবার সস্পত্তি জোরপূর্বক ভোগ-দখল করে রেখেছেন। সম্পত্তি চাইতে গেলে বাবাকে গালমন্দসহ শারিরিক ও মানসিক নির্যাতন করতেন এবং উল্টো বাবার কাছে সম্পত্তি পায় বলে হুমকি-ধমকি দিতেন।
এসময় তারা অভিযোগ করে বলেন, গত ২ জুন, সোমবার ফজর নামাজের পর জেডার কাছে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বাবা ঘর থেকে বের হয়ে যান। দীর্ঘক্ষন বাবা ঘরে ফিরে না আসায় আমরা বাবাকে খুঁজতে বের হয়ে তার লাশ পাই। তারা (মামলায় উল্লেখিত আসামিরা) আমার বাবাকে হত্যা করে আম গাছের সাথে লাশ ঝুলিয়ে রাখে।
তারা বলেন, এই ঘটনার পর এলাকায় পাঁচবার সালিশি বৈঠক হয়। ওই বৈঠকেও জেডা আমার বাবার সম্পত্তি দখলে রাখার অভিযোগ অস্বীকার করেন। অথচ কাগজপত্র অনুযায়ী আমার বাবা ১১শতাংশেরও বেশি সম্পত্তি পাওনা আছে এবং তা জেডার (ইসমাঈল পাটওয়ারী) দখলে রয়েছে বলে প্রমাণিত হয়।
এদিকে টাকা হাওলাত ও হত্যার অভিযোগ অস্বীকার করে ইসমাঈল পাটওয়ারী বলেন, আমার ভাইয়ের সাথে আমার কোন লেনদেন এবং তার কোন সম্পত্তিও আমার ভোগ-দখলে নেই। তারা (ভাতিজা) আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা কথা রটিয়েছে। উল্টো ভাইয়ের মৃত্যুর পর আমার বাড়িঘর ভাংচুর ও লুঠপাট করা হয়েছে। আমি আওয়ামী লীগ করি বলে তারা আমাকে হয়রানি করছে।
সালিশি বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, শুনেছি আমার ভাইয়ের (ইমান পাটওয়ারী) নামে ১১ শতাংশ সম্পত্তি বের হয়েছে। তবে এই সম্পত্তি আমার দখলে নেই। আমার অন্য ভাইদের কাছে রয়েছে। মাপঝোঁক করলে বের হয়ে আসবে কার কাছে এই সম্পত্তি আছে।
সালিশদার খন্দকার আরিফ বলেন, সম্পত্তির বিষয়টি কাগজপত্রনুযায়ী মৃত ইমান পাটওয়ারী সঠিক রয়েছে। তবে ইমান পাটওয়ারীর পৈত্রিক ও খরিদা সম্পত্তি মিলিয়ে ১১ শতাংশ ৮৬ পয়েন্ট কম রয়েছে। এসকল সম্পত্তি অভিযুক্ত ইসমাইল পাটওয়ারী দেনা রয়েছেন। পরিমাপ করলে বুঝা যাবে ইসমাইল পাটওয়ারীর দখলে কতটুকু রয়েছে। তবে ইসমাইল পাটওয়ারীর দখলে কিছু সম্পত্তি দখলে রয়েছে।
সালিশদার ও ইউপি সদস্য জামাল উদ্দিন বলেন, কিছু সম্পত্তি বের হয়েছে। তবে এখনি বলতে পারবোনা। বিষয়টি নিয়ে আমরা আরো পর্যালোচনা করতেছি। পরবর্তী বৈঠক আগামি শনিবার (২৬ জুলাই) হবে। ওই বৈঠক ও সালিশদারদের সিদ্ধান্তের পর বিস্তারিত বলতে পারবো।
হাজীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ফারুক বলেন, হত্যা মামলার বিষয়ে জানা নেই। তবে মামলার কপি হাতে পেলে এবং আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী পরবর্তীতে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তবে মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করা হয়েছে। ময়নাতদন্ত রিপোর্ট হাতে পেলে মৃত্যুর কারণ জানা যাবে।