ঢাকা 7:35 am, Friday, 18 July 2025

হাজীগঞ্জে এখনো অনেক এলাকা বিদ্যুৎহীন

  • Reporter Name
  • Update Time : 03:57:44 am, Thursday, 27 October 2022
  • 12 Time View
নিজস্ব প্রতিনিধিঃ
ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং এর প্রভাবে টানা বৃষ্টিপাত, ঝড় ও তীব্র বাতাসে চাঁদপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি- ১ এর বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের ব্যাপক য়তি হয়েছে। এ কারণে উপজেলার অনেক জায়গায় এখনো বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হয়নি। এতে কয়েক শতাধিক পরিবার গত ৩ দিন ধরে বিদ্যুৎ-বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছেন।
বিদ্যুৎ না থাকায় এসব এলাকার মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। নেই মোবাইল ফোনের চার্জ ও ইন্টারনেট এবং নস্ট হচ্ছে ফ্রিজের খাদ্যসামগ্রী। তবে আজকের (বৃহস্পতিবার) মধ্যে এসব এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু করার মাধ্যমে উপজেলায় শতভাগ নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে বলে বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ আশা প্রকাশ করে।
এর আগে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং এর প্রভাবে গত রোববার (২৩ অক্টোবর) থেকেই আবহাওয়া পরিস্থিতির অবনতি হতে থাকে। শুরু হয় গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি। সেই বৃষ্টি চলে সোমবার (২৪ অক্টোবর) মধ্যরাত পর্যন্ত। তবে সোমবার দিনব্যাপী ভারি বৃষ্টি হয় এবং এদিন বিকাল থেকে বৃষ্টির সাথে তীব্র বাতাস বয়ে যায়। এরমধ্যে সূর্যের দেখা মেলেনি।
জানা গেছে, রোববার ও সোমবার টানা দুই দিনের বৃষ্টিতে মাটি নরম হওয়ায় সোমবার সন্ধ্যার পর তীব্র বাতাসে উপজেলার কম-বেশি প্রায় সব এলাকায় গাছপালার ব্যাপক ক্ষতি হয়। এতে কোথাও গাছের ডালপালা ভেঙ্গে পড়ে, কোথাও গাছ উপড়ে যায়। আর গাছপালা উপড়ে বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের (ক্যাবল) অনেক ক্ষতি হয়।
আবার বেশ কয়েকটি স্থানে বিদ্যুতের খুঁটিও উপড়ে পড়ে। যার ফলে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। আর বিদ্যুৎ না থাকায় মোবাইলের চার্জ, নেটওয়ার্ক ও ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। এমন পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার ভোর থেকে লাইন মেরামত করে বিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সংযোগ সচল করতে বিদ্যুতের লোকজন কাজে নেমে পড়েন।
এতে উপজেলার বেশিরভাগ স্থানে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা গেলেও অনেক এলাকায় এখনো বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে। মঙ্গলবার হাজীগঞ্জ সদর, কালচোঁ উত্তর ও রাজারগাঁও ইউনিয়ন পরিদর্শন করে দেখা গেছে, এসব ইউনিয়নের অনেক এলাকায় এখনো বিদ্যুৎ আসেনি। এছাড়াও উপজেলার অন্যান্য এলাকায় ও বিদ্যুৎহীন রয়েছে।
এর অন্যতম কারণ হচ্ছে, মোবাইল ফোনে চার্জ না থাকায় অনেক এলাকার তথ্য বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ জানতে পারেনি বা ওইসব এলাকার লোকজনও জানাতে পারেনি। আবার বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন ও বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙ্গে পড়াসহ বিদ্যুৎ সঞ্চালনের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হওয়ায় বিদ্যুতের লোকজনকে কাজ করতেও হিমশিম খেতে হচ্ছে।
এদিকে এসব এলাকায় গত তিন দিন ধরে টানা বিদ্যুৎ না থাকায় দুর্ভোগে পড়েছেন, ওইসব এলাকার কয়েক শতাধিক বাসিন্দা। ব্যাহত হচ্ছে মোবাইল নেটওয়ার্ক। মোবাইল ফোনের চার্জও শেষ হয়ে গেছে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বাসাবাড়িতে ব্যবহারের পানি পর্যন্ত নাই। অধিকাংশ মানুষের রেফ্রিজারেটরে মাছ-মাংস নষ্ট হতে শুরু হয়েছে।
কথা হয় হাজীগঞ্জ সদর ইউনিয়নের সুবিদপুর গ্রামের উত্তর পাড়া মালের বাড়ির খুকি বেগমের সাথে। তিনি বলেন, গত তিন দিন ধরে আমাদের বিদ্যুৎ নেই। যার ফলে ফ্রিজে রাখা সকল খাবার নস্ট হয়ে যাচ্ছে। এছাড়াও মোবাইলে চার্জ না থাকায় কারো সাথে যোগাযোগ করতে পারছিনা।
একই গ্রামের আবুল বাশার দুলাল বলেন, মঙ্গলবার আমাদের এখানে পল্লী বিদ্যুতের লোকজন এসেছেন। তারা বলেছেন, তারের উপর উপড়ে পড়া থাকা গাছ ও ভেঙ্গে পড়া গাছের ডালপালা সরিয়ে নিতে হবে। তাদের কথা মতো আমরা তাই করেছি। কিন্তু এখনো (বুধবার দুপুর পর্যন্ত) বিদ্যুতের লোকজন আসেনি।
রাজাগাঁও ইউনিয়নের পশ্চিম রাজারগাঁও গ্রামের একজন দোকানি জানান, গত তিন দিন ধরে বিদ্যুৎ নেই। দোকানের ফ্রিজে থাকা পণ্য নষ্ট হওয়ার উপক্রম। দ্রুত এ সমস্যার সমাধান না করা গেলে অনেক লোকসান হবে।
এ বিষয়ে চাঁদপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) মো. আতিকুজ্জামান চৌধুরী জানান, ঘূর্ণিঝড়ে সিত্রাং এর প্রভাবে প্রায় ৩০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। তিনি বলেন, ঝড়ের তীব্রতার কারণে সোমবার রাতে বেশির ভাগ এলাকা বিদ্যুৎ-বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। বিদ্যুৎ লাইন সচল করতে পরের দিন (মঙ্গলবার) ভোরবেলা থেকে আমাদের লোকজন কাজে নেমে পড়েন এবং তারা সারাদিন কাজ করে যাচ্ছে।
তিনি জানান, এ পর্যন্ত চাঁদপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর আওতাধীন বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন এলাকার প্রায় ৯০ ভাগ বিদ্যুৎ সরবরাহ সচল করা হয়েছে। আগামিকালের (বৃহস্পতিবার) মধ্যে বাকি কাজ সম্পন্ন করার মাধ্যমে শতভাগ নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। এসময় তিনি গ্রাহকসহ সর্বস্তরের জনসাধারণের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেন।

উল্লেখ্য, এর আগে সোমবার (২৪ অক্টোবর) রাত ৯টায় ভোলার কাছ দিয়ে বরিশাল চট্টগ্রাম উপকূল অতিক্রম শুরু করে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং। পরবর্তী তিন থেকে চার ঘণ্টা তাণ্ডব চালিয়ে এটি উপকূল অতিক্রম সম্পন্ন করে। এরপর এটি দুর্বল হয়ে বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চল এবং উত্তর পূর্বাঞ্চল পেরিয়ে ভারতের দিকে চলে যায়। যার ফলে মঙ্গলবার ভোরবেরা থেকে আবহাওয়া পরিস্থিতি ভালো।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

Popular Post

হাজীগঞ্জ পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের দেয়ালে দেয়ালে আঁকা হচ্ছে ‘জুলাই অভ্যুত্থান’র গ্রাফিতি

হাজীগঞ্জে এখনো অনেক এলাকা বিদ্যুৎহীন

Update Time : 03:57:44 am, Thursday, 27 October 2022
নিজস্ব প্রতিনিধিঃ
ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং এর প্রভাবে টানা বৃষ্টিপাত, ঝড় ও তীব্র বাতাসে চাঁদপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি- ১ এর বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের ব্যাপক য়তি হয়েছে। এ কারণে উপজেলার অনেক জায়গায় এখনো বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হয়নি। এতে কয়েক শতাধিক পরিবার গত ৩ দিন ধরে বিদ্যুৎ-বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছেন।
বিদ্যুৎ না থাকায় এসব এলাকার মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। নেই মোবাইল ফোনের চার্জ ও ইন্টারনেট এবং নস্ট হচ্ছে ফ্রিজের খাদ্যসামগ্রী। তবে আজকের (বৃহস্পতিবার) মধ্যে এসব এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু করার মাধ্যমে উপজেলায় শতভাগ নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে বলে বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ আশা প্রকাশ করে।
এর আগে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং এর প্রভাবে গত রোববার (২৩ অক্টোবর) থেকেই আবহাওয়া পরিস্থিতির অবনতি হতে থাকে। শুরু হয় গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি। সেই বৃষ্টি চলে সোমবার (২৪ অক্টোবর) মধ্যরাত পর্যন্ত। তবে সোমবার দিনব্যাপী ভারি বৃষ্টি হয় এবং এদিন বিকাল থেকে বৃষ্টির সাথে তীব্র বাতাস বয়ে যায়। এরমধ্যে সূর্যের দেখা মেলেনি।
জানা গেছে, রোববার ও সোমবার টানা দুই দিনের বৃষ্টিতে মাটি নরম হওয়ায় সোমবার সন্ধ্যার পর তীব্র বাতাসে উপজেলার কম-বেশি প্রায় সব এলাকায় গাছপালার ব্যাপক ক্ষতি হয়। এতে কোথাও গাছের ডালপালা ভেঙ্গে পড়ে, কোথাও গাছ উপড়ে যায়। আর গাছপালা উপড়ে বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের (ক্যাবল) অনেক ক্ষতি হয়।
আবার বেশ কয়েকটি স্থানে বিদ্যুতের খুঁটিও উপড়ে পড়ে। যার ফলে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। আর বিদ্যুৎ না থাকায় মোবাইলের চার্জ, নেটওয়ার্ক ও ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। এমন পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার ভোর থেকে লাইন মেরামত করে বিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সংযোগ সচল করতে বিদ্যুতের লোকজন কাজে নেমে পড়েন।
এতে উপজেলার বেশিরভাগ স্থানে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা গেলেও অনেক এলাকায় এখনো বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে। মঙ্গলবার হাজীগঞ্জ সদর, কালচোঁ উত্তর ও রাজারগাঁও ইউনিয়ন পরিদর্শন করে দেখা গেছে, এসব ইউনিয়নের অনেক এলাকায় এখনো বিদ্যুৎ আসেনি। এছাড়াও উপজেলার অন্যান্য এলাকায় ও বিদ্যুৎহীন রয়েছে।
এর অন্যতম কারণ হচ্ছে, মোবাইল ফোনে চার্জ না থাকায় অনেক এলাকার তথ্য বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ জানতে পারেনি বা ওইসব এলাকার লোকজনও জানাতে পারেনি। আবার বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন ও বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙ্গে পড়াসহ বিদ্যুৎ সঞ্চালনের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হওয়ায় বিদ্যুতের লোকজনকে কাজ করতেও হিমশিম খেতে হচ্ছে।
এদিকে এসব এলাকায় গত তিন দিন ধরে টানা বিদ্যুৎ না থাকায় দুর্ভোগে পড়েছেন, ওইসব এলাকার কয়েক শতাধিক বাসিন্দা। ব্যাহত হচ্ছে মোবাইল নেটওয়ার্ক। মোবাইল ফোনের চার্জও শেষ হয়ে গেছে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বাসাবাড়িতে ব্যবহারের পানি পর্যন্ত নাই। অধিকাংশ মানুষের রেফ্রিজারেটরে মাছ-মাংস নষ্ট হতে শুরু হয়েছে।
কথা হয় হাজীগঞ্জ সদর ইউনিয়নের সুবিদপুর গ্রামের উত্তর পাড়া মালের বাড়ির খুকি বেগমের সাথে। তিনি বলেন, গত তিন দিন ধরে আমাদের বিদ্যুৎ নেই। যার ফলে ফ্রিজে রাখা সকল খাবার নস্ট হয়ে যাচ্ছে। এছাড়াও মোবাইলে চার্জ না থাকায় কারো সাথে যোগাযোগ করতে পারছিনা।
একই গ্রামের আবুল বাশার দুলাল বলেন, মঙ্গলবার আমাদের এখানে পল্লী বিদ্যুতের লোকজন এসেছেন। তারা বলেছেন, তারের উপর উপড়ে পড়া থাকা গাছ ও ভেঙ্গে পড়া গাছের ডালপালা সরিয়ে নিতে হবে। তাদের কথা মতো আমরা তাই করেছি। কিন্তু এখনো (বুধবার দুপুর পর্যন্ত) বিদ্যুতের লোকজন আসেনি।
রাজাগাঁও ইউনিয়নের পশ্চিম রাজারগাঁও গ্রামের একজন দোকানি জানান, গত তিন দিন ধরে বিদ্যুৎ নেই। দোকানের ফ্রিজে থাকা পণ্য নষ্ট হওয়ার উপক্রম। দ্রুত এ সমস্যার সমাধান না করা গেলে অনেক লোকসান হবে।
এ বিষয়ে চাঁদপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) মো. আতিকুজ্জামান চৌধুরী জানান, ঘূর্ণিঝড়ে সিত্রাং এর প্রভাবে প্রায় ৩০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। তিনি বলেন, ঝড়ের তীব্রতার কারণে সোমবার রাতে বেশির ভাগ এলাকা বিদ্যুৎ-বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। বিদ্যুৎ লাইন সচল করতে পরের দিন (মঙ্গলবার) ভোরবেলা থেকে আমাদের লোকজন কাজে নেমে পড়েন এবং তারা সারাদিন কাজ করে যাচ্ছে।
তিনি জানান, এ পর্যন্ত চাঁদপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর আওতাধীন বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন এলাকার প্রায় ৯০ ভাগ বিদ্যুৎ সরবরাহ সচল করা হয়েছে। আগামিকালের (বৃহস্পতিবার) মধ্যে বাকি কাজ সম্পন্ন করার মাধ্যমে শতভাগ নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। এসময় তিনি গ্রাহকসহ সর্বস্তরের জনসাধারণের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেন।

উল্লেখ্য, এর আগে সোমবার (২৪ অক্টোবর) রাত ৯টায় ভোলার কাছ দিয়ে বরিশাল চট্টগ্রাম উপকূল অতিক্রম শুরু করে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং। পরবর্তী তিন থেকে চার ঘণ্টা তাণ্ডব চালিয়ে এটি উপকূল অতিক্রম সম্পন্ন করে। এরপর এটি দুর্বল হয়ে বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চল এবং উত্তর পূর্বাঞ্চল পেরিয়ে ভারতের দিকে চলে যায়। যার ফলে মঙ্গলবার ভোরবেরা থেকে আবহাওয়া পরিস্থিতি ভালো।